Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

Satpur Kamil Madrasah

সৎপুর কামিল মাদরাসা সিলেট জেলার বিশ্বনাথ থানায় অবস্থিত একটি ঐতিহ্যবাহী কামিল ও অনার্স মাদরাসা। মাদরাসাটি আলিয়া মাদরাসা শিক্ষাক্রমের অধীনে কামিল স্তর পর্যন্ত শিক্ষা প্রদান করে থাকে । ২০১৭ সালে “ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়”এর অধীনে ফাজিল পর্যায়ে অনার্স কোর্স চালু করা করা হয়।প্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী সংখ্যা বর্তমানে প্রায় দেড় হাজারের অধিক। সাম্প্রতিক সময়ে ২০১৬ সালে শুরু হওয়া মাদ্রাসাটির ঐতিহ্যবাহী দ্বিতল ভবনটির পুনঃসংস্কার কার্যক্রম সমাপ্ত হয়েছে।

 

 

স্থাপিতঃ ১৯৪৮ প্রতিষ্ঠাতাঃ মরহুম আল্লামা গোলাম হুসাইন (রহ.) বিদ্যালয় কোডঃ EIIN নং-১৩০২০৫ অধ্যক্ষঃ আবু জাফর মুহাম্মদ নুমান শিক্ষার্থী সংখ্যাঃ ১৫০০ ভাষার মাধ্যমঃ বাংলা , আরবি আয়তনঃ ৪.৩৮ একর অন্তর্ভুক্তিঃ ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়

 

ইতিহাস: হযরত আল্লামা গোলাম হোসাইন (রহ.) ১৯৪৫ ইং সালে কামিল পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জন করে যখন নিজ এলাকায় ফিরেন, এলাকাটি ছিলো শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ও কুসংকারাচ্ছন্ন । এতে তার অন্তর ব্যথিত হয়ে উঠলে তিনি শিক্ষা ও দ্বীন প্রচারের উদ্দেশ্যে একটি মাদরাসা স্থাপনে দৃঢ় প্রত্যয়ী হয়ে উঠেন । ১৯৪৮ সালে তিনি নিজ বাড়িতে দুজন শীক্ষার্থীকে নিয়ে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করেন। অতঃপর স্বীয় মুর্শিদ কাইমগঞ্জ নিবাসী পীর হামিদ উল্লাহ সাহেব (রহ.) এর পরামর্শক্রমে ১৯৫২ সালে তিনি হজ্জে গমণ করলেন এবং সেখানে খাবে বা খেয়ালে নবী করিম (সা.) এর দিদারে ধন্য হয়ে মাদরাসা প্রতিষ্ঠার অনুমতি লাভ করেন । হজ্জ থেকে ফিরে এসে তিনি উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলিম শায়খুল হাদিস আল্লামা হরমুজ উল্লাহ সয়দা ছাহেব (রহ.) কে অতিথি করে মাদরাসার প্রথম জলছা করেন এবং আয়োজনটি সফল হয় । এরপর থেকেই মাদরাসার অগ্রযাত্রা শুরু হয়। অতঃপর প্রতিষ্ঠাতার বাড়ি থেকে বাড়ির নিকটবর্তী ঈদগাহে মাদরাসাটি স্থানান্তরিত হয় । উন্নতির ধারাবাহিকতায় মাদরাসাটি ১৯৫৮ সালে দাখিল , ১৯৬০ সালে আলিম , ১৯৬২ সালে ফাযিল এবং ১৯৬৫ সালে কামিল হাদিস বিভাগে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক স্বীকৃতি লাভ করে । তখন পর্যন্ত বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে কামিল স্তরের মাদরাসা ছিলো মাত্র দুটি । মাদরাসার এ স্তর-ভিত্তিক উন্নয়নের জন্য অখন্ড জমির প্রয়োজন হলে তা প্রতিষ্ঠাতা নিজে দান করেন । এছাড়াও স্থানীয় শুভাকাঙ্ক্ষীগণ এগিয়ে আসায় বিক্ষিপ্ত আরও কিছু জমি মাদরাসার আওতাভূক্ত হয় । প্রতিষ্ঠানটি প্রাথমিক স্তর থেকে সর্বোচ্চ কামিল স্তর পর্যন্ত অল্প সময়ে উন্নিত হওয়া ছিল প্রতিষ্ঠাতার এক কারামাত।

 

মাদরাসাটি স্থাপন করতে গিয়ে আল্লামা গোলাম হোসাইন (রহ.) স্বীয় মুর্শিদ পীর "হামিদ উল্লাহ ছাহেব (রহ.) " ও "আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (রহ.)" এর প্রত্যক্ষ সহযোগিতা লাভ করেছিলেন। মূলত এ তিন ওলীর দুয়া ফায়েজ ও বরকতে মাদরাসাটি মাকবুলিয়াতের উচ্চাসনে আরোহণ করে । এ বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করে মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ ও শায়খুল হাদিস 'আল্লামা হবিবুর রহমান ছাহেব' ষাটের দশকে একটি উর্দূ কবিতা লিখেছিলেন, যার প্রথম দু চরণ :
"ইয়ে গুলামী বাগ হো – ওর হামিদী গুলযার হো / ইয়ে লতিফী ফায়েয কা এক – খুশমনা দরবার হো"।
 
এছাড়াও মাদরাসার উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন আল্লামা হরমুজ উল্লাহ শয়দা ছাহেব তুড়খোলী (রহ.) , প্রতিষ্ঠাতার স্বীয় ভ্রাতা পীর গোলাম হাফিজ (রহ.) , জনাব মৌলভী মো.আব্দুল মালিক সুফী ছাহেব'করপাড়া ও মরহুম জনাব আল্লামা ইসহাক আহমদ ছাহেব (রহ.)।
আল্লামা গোলাম হোসাইন সৎপুরী রহ. ১৯৭৫ সালের ১৯ মার্চ মোতাবেক ৫ চৈত্র ইন্তেকাল করেন । উক্ত সনের মাঘ মাসের ১ম বুধবার মাদরসার বার্ষিক জলছায় তিনি বলেছিলেন “ এ মাদরাসার মঞ্জুরী মদিনা শরীফ থেকে আনা হয়েছে । এর ক্ষতি যে করবে আল্লাহ তার ক্ষতি করবেন । তিনি দোয়া করেছেন “ ইমাম মাহদী (আ.) এসে এ মাদরাসা দেখে যেন খুশী হন । সর্বশেষ ২০১৭ সালে মাদরাসাটিতে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে "আল-হাদিস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ" বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু হয়।

অবস্থানঃ মাদরাসাটি সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলার অন্তর্ভূক্ত লামাকাজী ইউনিয়নে সৎপুর গ্রামে অবস্থিত । বিশ্বনাথ-লামাকাজী সড়কটি এবং সিলেট-ছাতক রেলওয়ের সৎপুর স্টেশনটি মাদরাসাটির নিকটেই অবস্থিত

 

প্রাতিষ্ঠানিক ও অন্যান্য তথ্যাবলিঃ মাদরাসার মোট জমির পরিমাণ হলো ৪.৩৮ একর । তিনটি একাডেমিক ভবন , একটি প্রশাসনিক ভবন ও একটি ছাত্রাবাস মিলিয়ে মোট ৫টি ভবন ও একটি মাঠ নিয়ে মোট ১.৬৫ একর জমির উপর মাদরাসা ক্যাম্পাসটি দন্ডায়মান। তাফসীর , হাদিস , ফিকহ , ইতিহাস , মুক্তিযুদ্ধ , ভাষা , দূর্লভ অভিধান , রেফারেন্স বুক সহ প্রায় ছ’হাজার কিতাবাদি নিয়ে মাদরাসাটির একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার রয়েছে । প্রতি বছর জানুয়ারি মাসের শেষ বুধবার বার্ষিক জলছা ও কামিল পাশ শীক্ষার্থীদের পাগড়ী দেয়া হয় ।এছাড়াও ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মান-সম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে "আল-হুসাইন একাডেমি" নামে মাদরাসার একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান রয়েছে । মাদরাসার কির্তীমান ছাত্রদের মাঝে অন্যতম হলেন মরহুম আল্লামা ইরশাদ হোসাইন গোয়াহরী (রহ.), জনাব হযরত মাওলানা মুবাশ্বির আলী প্রতাপপুরী, জনাব হযরত মাওলানা আরশদ আলী প্রতাপপুরী (রহ.), হযরত মাওলানা আব্দুস সালাম তেলিকুনী (রহ.), শায়খুল হাদিস মাওলানা আব্দুল হাই ছাতকী, শায়খুল হাদিস মাওলানা রইছুদ্দীন হামজাপুরী (রহ.) হযরত মাওলানা শফিকুর রহমান পাখিছিরী ।